রবিবার, ৪ জুলাই, ২০২১

মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী লড়াইয়ে নিহত ২৫


গত ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের জান্তা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির ক্ষমতা দখলের পর থেকে দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় লোকজন প্রতিরক্ষা বাহিনী তৈরি করে নৃশংস জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছেন। তবে বেশির ভাগ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

ডেপাইনের এক বাসিন্দা বলেন, গত শুক্রবার সকালে গ্রামের কাছে চারটি ট্রাক থেকে সেনারা নামেন। স্থানীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর তরুণেরা তাঁদের ঠেকাতে অবস্থান নেন।

কিন্তু তাঁদের হাতে ছিল স্থানীয়ভাবে তৈরি অস্ত্র। নিরাপত্তা বাহিনীর ভারী অস্ত্রের গোলাগুলিতে তাঁরা পিছু হটেন। ওই লড়াইয়ের পর ২৫টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

বিবিসি বার্মিজ ও স্থানীয় থান লিউইন খেট নিউজেও একই সংখ্যার কথা বলা হয়েছে।
তবে ডেপিয়ানের পিপলস ডিফেন্স ফোর্স তাদের ফেসবুকে বলেছে, তাদের ১৮ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ১১ জন।




মিয়ানমারের জান্তাদের প্রতিরোধে পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস নামের প্রতিরক্ষা বাহিনী তৈরি হয়েছে। তাদের সঙ্গে দেশটির সামরিক প্রশাসনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে গঠিত ছায়া সরকার ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের সম্পর্ক রয়েছে।

এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে অনেক বেসামরিক নাগরিকের প্রাণ যায়।

কারাবরণ করতে হয় অনেককে। সহিংসতা খানিকটা কমে আসতে শুরু করলে বেশ কিছু সংগঠন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার ঘোষণা দেয়।

জান্তাবিরোধী সংগঠনগুলো সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার পর সেখানে আবার সহিংসতা বেড়েছে। এসব সংগঠনের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী তাদের পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটতে পারে।



স্থানীয় এক পর্যবেক্ষণ সংগঠনের দেওয়া তথ্যমতে, গত ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে সহিংসতায় ৮৮০ জন নিহত হয়েছেন।

মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় দুই ডজনের বেশি জাতিগত সশস্ত্র বিদ্রোহীরা জান্তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই লড়াই করছেন। তবে ডেপাইন হচ্ছে সংখ্যালঘু বামারদের কেন্দ্রস্থল, যেখানে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা আধিপত্য দেখিয়ে থাকেন।

মিয়ানমারে সাম্প্রতিক সেনা অভ্যুত্থানের আগে থেকেই অন্তত ২০টি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী রয়েছে। যারা বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং অনেক হতাহত হয়। জান্তা সরকার ক্ষমতায় আসার পর নতুন করে তৈরি হওয়া এসব প্রতিরক্ষা দল সেই পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করেছে।

ব্রাসেলসভিত্তিক দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) বলছে, সশস্ত্র বিদ্রোহের মুখে পড়লে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তাদের সেনাসদস্যদের বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে নামিয়ে দিতে পারে। এতে ব্যাপক প্রাণহানি হবে। তখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখোমুখি হবেন নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। সহিংসতা বাড়লে বাস্তুচ্যুতের সংখ্যাও বেড়ে যাবে।

আইসিজির তথ্যমতে, মিয়ানমারের এমন সব জায়গায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে, যেসব জায়গায় গত এক দশকে কোনো সহিংসতা হয়নি। জাতিসংঘের গত সপ্তাহের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

৫ হাজার ২০০ জনের বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে। তবে দেশটির সামরিক কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব সংখ্যা ঠিক নয়।

এদিকে মিয়ানমারের আদালতে ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার বিচারকাজ চলছে।

মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি
মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চি
ছবি: রয়টার্স

জান্তা সরকারের অভিযোগ, গত বছর নির্বাচনে সু চি ও তাঁর দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) কারচুপি করেছে। এ ছাড়া সু চির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ওয়াকিটকি রাখা, দুর্নীতি, করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ লঙ্ঘন এবং রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সু চির ১৪ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চি দেশটিতে সেনাশাসনের মুখে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। গত মঙ্গলবার আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় হাজির হন তিনি। সেখানেই দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা সু চি বলেছেন বলে জানান তাঁর আইনজীবী।

এখনই মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানান জাতিসংঘের মহাসচিব।

গুতেরেসের মুখপাত্র এরি কানেকো বলেন, ‘মিয়ানমারে চলমান সহিংসতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে জনসাধারণের নির্বিচার গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনায় আমরা বেশ উদ্বিগ্ন।’


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios:

দয়া করে কোনো অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করবেন না।